'নঈম স্যার একজন ব্যক্তি নন - উনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান' - এই কথাটি দিয়ে শুরু করেছি কারণ আমার আন্ডারগ্র্রাজুয়েটে অধ্যাপক ড. নঈম চৌধুরী স্যার এর সম্পর্কে করা উনারই আরেকজন ছাত্র ও স্বনামধন্য প্রফেসর এর উক্তি এটি। কথাটি এখনো আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের কাছে বলি। নঈম স্যার ছিলেন এমন একজন ব্যাক্তিত্ব - যাঁর কাছে ছিল আমাদের সব সমস্যার সমাধান, সকল সিদ্ধান্তহীনতার উপদেশ, সব প্রশ্নের উত্তর। স্যার এর ঘটনাবহুল জীবনের অনেকাংশই কেটেছে ছাত্রছাত্রীদের সাথে- তার মধ্যে আমি হয়তো ক্ষুদ্রতম সময়ের সান্নিধ্য পেয়েছিলাম কিন্তু সেটাই আমাদের অনেকের মতোই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্তপূর্ন শিক্ষার এবং সম্মানের অংশ হয়ে থাকবে জীবনে।
অসংখ্য ঘটনার মাঝে স্যার এর সাথে কাজ করার প্রতিটা অভিজ্ঞতাই বলতে গেলে আমার জন্যে আলাদা করে মনে রাখার মতো- বাড়িয়ে বলছিনা, কারণ আমি পারতপক্ষে কারো সাহায্য এড়িয়ে চলতাম। স্যার এতো বড় একজন মানুষ এবং সবাই উনার কাছে আসেন সব ধরণের কাজ নিয়ে- তাই আমি ভাবতাম যে আমার মতো এতো নগণ্য ছাত্রের জন্যে উনার সময় হবে কিনা। কিন্তু পরবর্তীতে আবিষ্কার করলাম যে আমার স্নাতক চলাকালীন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে, প্রথম রিসার্চপ্রেসেন্টেশন, প্রথম প্রফেশনাল গাইডলাইন, প্রথম সায়েন্টিফিক পাব্লিকেশন ইত্যাদি সব কিছুই এই মানুষটির হাত ধরে হলো। আমার স্নাতক থিসিস এর সুপারভাইজর ছিলেন নঈম স্যার এবং এর সাথে উনার আরেকজন ছাত্র (আমার সুপারভাইজর ও শিক্ষক) ড. মাহবুব হোসাইন স্যার যাঁর কথা উঠে আসে প্রতিক্ষেত্রেই- উনার অবদানও আমার পক্ষে বলে শেষ করা সম্ভব নয়।
আমার অসংখ্য অর্জনে যেমন নঈম স্যারের অবদান, তেমনি বিগত প্রায় এক দশকের অসংখ্য দুঃসময়ের ত্রাণকর্তা হিসেবে সর্বদা মাথার উপর ছিলেন। একাডেমিক কিংবা প্রফেশনাল বিষয়ের বাইরেও, আমাদের অনেকেরই ব্যাক্তিগত বিষয়ের সমাধান এবং পথপ্রদর্শনে ছিল এই মানুষটির অবদান। নিজের এতো কাজের চাপ কিংবা দায়িত্বের মাঝেও কাউকে ফিরিয়ে দেননি - যত ক্ষুদ্র ব্যাপারেই সাহায্য চাওয়া হতো না কেন, এমনকি আমার নিজের অভিজ্ঞতাতেই আছে যে স্যার আমার জন্যে নিজের মিটিং স্থগিত করেছেন! এসব উনার অবস্থানের একজন ব্যাক্তি করছেন- এটাই কল্পনাতীত। এরকম অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যা বলেই বই এর পৃষ্ঠায় আবদ্ধ করা সম্ভব নয়।
স্যার দিনটি অনেক ভোরে শুরু করে, সরকারি কাজের অসম্ভব ব্যাস্ততায় থেকে, সন্ধ্যা রাতে আমাদের ক্লাস নিতে আসতেন এবং একটানা দাঁড়িয়ে ৩/৪ ঘন্টা লেকচার দিতেন সেই রাত ১০ তা পর্যন্ত এবং এর পরেও আমাদের কোনো কাজ থাকলে সেগুলো গুরুত্বের সাথে আলোচনা করতেন কিংবা সমাধানের চেষ্টা করতেন। উনি বয়সকালেও কিভাবে এতো এনার্জেটিক, স্বচ্ছ বুদ্ধি এবং কর্মবহুল থাকতেন- তা সর্বদা আমাদের জন্যে বিস্ময়কর ছিল। মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন ক্যারিশম্যাটিক, বিচক্ষণ এবং দূরদর্শী। যখন আমরা (ছাত্রছাত্রী কিংবা শিক্ষক শিক্ষিকা অথবা যে কেউই হোক না কেন) কোনো সমাধান খুঁজে পেতাম না- স্যার ছিলেন আমাদের ভরসা। তাঁর রসবোধ ছিল তীক্ষ্ণ এবং অত্যন্ত বিচক্ষনতার সাথে যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাবলীলতা। একাডেমিক শিক্ষা থেকে স্যারের কাছে 'লাইফ লেসন্স' মনে হয় বেশি শিখেছি। স্যার এর সমন্বয়ক হবার যে গুণগুলো অবলোকন করার সুযোগ হয়েছিল- সেই শিক্ষাগুলো আজ আমার প্রফেশনাল কাজের অন্যতম হাতিয়ার। স্যার এর কাছে আমি বহু ভাবে ঋণী -হয়তো অনেকেই আছেন এরকম যারা স্যারের সাহায্যে অত্যন্ত বড় জায়গায় অবস্থান করছেন।
নঈম স্যারের সম্পর্কে সব বলে শেষ করা সম্ভব নয়, সব লিখতেও চাইনা। স্যার এর অবস্থানটা অনেক আবেগপূর্ণ একটি স্থানে। স্যারএর আদর্শে চলার যোগ্যতাও অর্জন করতে পারিনি এখনো। এখনো পর্যন্ত আমার যত আবিষ্কার কিংবা অর্জন- আফসোস রয়ে যায় যে স্যার যদি আজকে বেঁচে থেকে দেখে যেতেন। আমার পরিবারকে আমার অর্জনগুল যেভাবে জানাতে চাই, সবসময়েই চাইতাম যে স্যারও থাকুক এসবের ভাগীদার হয়ে। স্যার এর সমর্থন আর অনুমোদন ছিল আমার কাছে আশীর্বাদ।
স্যার এর সাথে শেষ কথা হয়েছিল এক হাসপাতালে যেখানে এক ব্যাক্তিগত কারণে উনাকে বুকে জড়িয়ে ধরার সৌভাগ্য হয়েছিল। তিনি চলে যাওয়ার কয়েক মাস আগেই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় এক সিদ্ধান্ত ফয়সালা করে গিয়েছেন- যা আমার পরিবারও করতে পারেনি। স্যার এর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এমএনএস ডিপার্টমেন্টে ২০১১ সালে সেপ্টেম্বরে, শেষ দেখা হয়েছিল বনানী কবরস্থানে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের এক বিকেলে।
ভাল থাকবেন স্যার।
সালমান খান প্রমন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি
অধ্যাপক ড. নঈম চৌধুরী স্যার
অসংখ্য ঘটনার মাঝে স্যার এর সাথে কাজ করার প্রতিটা অভিজ্ঞতাই বলতে গেলে আমার জন্যে আলাদা করে মনে রাখার মতো- বাড়িয়ে বলছিনা, কারণ আমি পারতপক্ষে কারো সাহায্য এড়িয়ে চলতাম। স্যার এতো বড় একজন মানুষ এবং সবাই উনার কাছে আসেন সব ধরণের কাজ নিয়ে- তাই আমি ভাবতাম যে আমার মতো এতো নগণ্য ছাত্রের জন্যে উনার সময় হবে কিনা। কিন্তু পরবর্তীতে আবিষ্কার করলাম যে আমার স্নাতক চলাকালীন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে, প্রথম রিসার্চপ্রেসেন্টেশন, প্রথম প্রফেশনাল গাইডলাইন, প্রথম সায়েন্টিফিক পাব্লিকেশন ইত্যাদি সব কিছুই এই মানুষটির হাত ধরে হলো। আমার স্নাতক থিসিস এর সুপারভাইজর ছিলেন নঈম স্যার এবং এর সাথে উনার আরেকজন ছাত্র (আমার সুপারভাইজর ও শিক্ষক) ড. মাহবুব হোসাইন স্যার যাঁর কথা উঠে আসে প্রতিক্ষেত্রেই- উনার অবদানও আমার পক্ষে বলে শেষ করা সম্ভব নয়।
আমার অসংখ্য অর্জনে যেমন নঈম স্যারের অবদান, তেমনি বিগত প্রায় এক দশকের অসংখ্য দুঃসময়ের ত্রাণকর্তা হিসেবে সর্বদা মাথার উপর ছিলেন। একাডেমিক কিংবা প্রফেশনাল বিষয়ের বাইরেও, আমাদের অনেকেরই ব্যাক্তিগত বিষয়ের সমাধান এবং পথপ্রদর্শনে ছিল এই মানুষটির অবদান। নিজের এতো কাজের চাপ কিংবা দায়িত্বের মাঝেও কাউকে ফিরিয়ে দেননি - যত ক্ষুদ্র ব্যাপারেই সাহায্য চাওয়া হতো না কেন, এমনকি আমার নিজের অভিজ্ঞতাতেই আছে যে স্যার আমার জন্যে নিজের মিটিং স্থগিত করেছেন! এসব উনার অবস্থানের একজন ব্যাক্তি করছেন- এটাই কল্পনাতীত। এরকম অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যা বলেই বই এর পৃষ্ঠায় আবদ্ধ করা সম্ভব নয়।
স্যার দিনটি অনেক ভোরে শুরু করে, সরকারি কাজের অসম্ভব ব্যাস্ততায় থেকে, সন্ধ্যা রাতে আমাদের ক্লাস নিতে আসতেন এবং একটানা দাঁড়িয়ে ৩/৪ ঘন্টা লেকচার দিতেন সেই রাত ১০ তা পর্যন্ত এবং এর পরেও আমাদের কোনো কাজ থাকলে সেগুলো গুরুত্বের সাথে আলোচনা করতেন কিংবা সমাধানের চেষ্টা করতেন। উনি বয়সকালেও কিভাবে এতো এনার্জেটিক, স্বচ্ছ বুদ্ধি এবং কর্মবহুল থাকতেন- তা সর্বদা আমাদের জন্যে বিস্ময়কর ছিল। মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন ক্যারিশম্যাটিক, বিচক্ষণ এবং দূরদর্শী। যখন আমরা (ছাত্রছাত্রী কিংবা শিক্ষক শিক্ষিকা অথবা যে কেউই হোক না কেন) কোনো সমাধান খুঁজে পেতাম না- স্যার ছিলেন আমাদের ভরসা। তাঁর রসবোধ ছিল তীক্ষ্ণ এবং অত্যন্ত বিচক্ষনতার সাথে যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাবলীলতা। একাডেমিক শিক্ষা থেকে স্যারের কাছে 'লাইফ লেসন্স' মনে হয় বেশি শিখেছি। স্যার এর সমন্বয়ক হবার যে গুণগুলো অবলোকন করার সুযোগ হয়েছিল- সেই শিক্ষাগুলো আজ আমার প্রফেশনাল কাজের অন্যতম হাতিয়ার। স্যার এর কাছে আমি বহু ভাবে ঋণী -হয়তো অনেকেই আছেন এরকম যারা স্যারের সাহায্যে অত্যন্ত বড় জায়গায় অবস্থান করছেন।
নঈম স্যারের সম্পর্কে সব বলে শেষ করা সম্ভব নয়, সব লিখতেও চাইনা। স্যার এর অবস্থানটা অনেক আবেগপূর্ণ একটি স্থানে। স্যারএর আদর্শে চলার যোগ্যতাও অর্জন করতে পারিনি এখনো। এখনো পর্যন্ত আমার যত আবিষ্কার কিংবা অর্জন- আফসোস রয়ে যায় যে স্যার যদি আজকে বেঁচে থেকে দেখে যেতেন। আমার পরিবারকে আমার অর্জনগুল যেভাবে জানাতে চাই, সবসময়েই চাইতাম যে স্যারও থাকুক এসবের ভাগীদার হয়ে। স্যার এর সমর্থন আর অনুমোদন ছিল আমার কাছে আশীর্বাদ।
স্যার এর সাথে শেষ কথা হয়েছিল এক হাসপাতালে যেখানে এক ব্যাক্তিগত কারণে উনাকে বুকে জড়িয়ে ধরার সৌভাগ্য হয়েছিল। তিনি চলে যাওয়ার কয়েক মাস আগেই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় এক সিদ্ধান্ত ফয়সালা করে গিয়েছেন- যা আমার পরিবারও করতে পারেনি। স্যার এর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এমএনএস ডিপার্টমেন্টে ২০১১ সালে সেপ্টেম্বরে, শেষ দেখা হয়েছিল বনানী কবরস্থানে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের এক বিকেলে।
ভাল থাকবেন স্যার।
সালমান খান প্রমন, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি
অধ্যাপক ড. নঈম চৌধুরী স্যার